 |
কমিউনিকেশন স্যাটেলাইটের ইতিহাস
|
স্যাটেলাইটের মাধ্যমে যোগাযোগের ধারণা প্রথম ছাপা হয়’দ্যা ব্রিক মুন’ শিরোনামের একটি ছোটগল্পে। গল্পটি লিখেছিলেন আমেরিকান পাদ্রী এবং লেখক এডওয়ার্ড এভারেট হেইল। এই গল্প প্রকাশিত হয়েছিল ১৮৬৯ সালে ‘দ্যা আটলান্টিক মান্থলি’ পত্রিকায়। গল্পে ইট দিয়ে তৈরি ২০০ ফুট বা ৬০ মিটার ব্যাসের একটি স্যাটেলাইটের ব্যাপারে বলা হয়েছিল।
এই স্যাটেলাইট কীভাবে নির্মাণ হলো আর উৎক্ষেপণের মাধ্যমে কীভাবে পৃথিবীর কক্ষপথে পাঠানো হলো, তার বর্ণনা আছে গল্পে। ইটের তৈরি এই স্যাটেলাইটের নাম দেয়া হয়েছিল ‘ব্রিক মুন’। এই ‘ব্রিক মুন’-এ থাকা মানুষেরা স্যাটেলাইটের বিভিন্ন জায়গায় গিয়ে মোর্স কোড সংকেত পৃথিবীতে পাঠাতো। এভাবেই নাবিকদের পথ চিনতে সাহায্য করতো এই স্যাটেলাইট।
তবে, হারমান পোটোচনিক (১৮৯২-১৯২৯) নামের একজন ইলেকট্রিকাল ইঞ্জিনিয়ার এবং মহাকাশতত্ত্ববিদ প্রথম প্রস্তাব করেন যে, স্পেস স্টেশনের সঙ্গে পৃথিবীর যোগাযোগের জন্য রেডিও ব্যবহার করা যেতে পারে। তিনি ছিলেন স্লোভেনিয়ার বাসিন্দা।
কিন্তু ১৯৪৫ সালের অক্টোবরে ব্রিটিশ উদ্ভাবক এবং লেখক আর্থার সি. ক্লার্ক ‘এক্সট্রাটেরেস্ট্রিয়াল রিলে’ শিরোনামের একটি প্রবন্ধ প্রকাশ করেন। প্রবন্ধটি ‘ওয়্যারলেস ওয়ার্ল্ড’ নামের একটি পত্রিকায় এই প্রবন্ধ ছাপানো হয়েছি
ল। রেডিও সংকেত পাঠানোর জন্য কৃত্রিম উপগ্রহ বা স্যাটেলাইট স্থাপনের ব্যাপারে লিখেছিলেন তিনি। তাই ক্লার্ককে অনেক সময় যোগাযোগ উপগ্রহ বা ‘কমিউনিকেশন স্যাটেলাইট’ এর উদ্ভাবক হিসেবে বিবেচনা করা হয়।
১. প্রথম কৃত্রিম উপগ্রহ
‘স্পুটনিক ১’ ছিল পৃথিবীর প্রথম কৃত্রিম স্যাটেলাইট। সোভিয়েত ইউনিয়নের মহাকাশ কর্মসূচির অংশ হিসেবে ১৯৫৭ সালের ৪ অক্টোবর এই স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণ করা হয়। স্যাটেলাইটটি পৃথিবীর নিম্ন কক্ষপথে পাঠানো হয়েছিল। কার্যক্রম চালানোর জন্য এতে ৩টি সিলভার-জিঙ্ক ব্যাটারি যুক্ত ছিল।
মহাকাশে উৎক্ষেপণের পরে প্রায় ৩ সপ্তাহ পৃথিবীতে রেডিও সংকেত পাঠিয়েছিল ‘স্পুটনিক ১’। এরপরে এর সাথে যুক্ত ব্যাটারির চার্জ ফুরিয়ে যায়। তবে বিকল হয়ে যাওয়ার পরও প্রায় দুই মাস ধরে কক্ষপথে ছিল এই স্যাটেলাইট। এরপর ১৯৫৮ সালের ৪ জানুয়ারি পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলে প্রবেশ করে এটি।
‘স্পুটনিক ১’ দেখতে চকচকে এক ধাতব গোলকের মতো। এর ব্যাস ৫৮ সেন্টিমিটার বা ২৩ ইঞ্চি। রেডিও সংকেত সম্প্রচারের জন্য এর বাইরের দিকে চারটি রেডিও অ্যান্টেনা যুক্ত ছিল। আর স্যাটেলাইট থেকে আসা রেডিও সংকেত যেকোনো রেডিও অপারেটর সহজেই শনাক্ত করতে পারতো।
রাশিয়ান বা রুশ ভাষায় জ্যোতির্বিজ্ঞানের ক্ষেত্রে ‘স্পুটনিক’ শব্দটি দিয়ে ‘উপগ্রহ’ বা ‘স্যাটেলাইট’ বোঝানো হয়। শব্দটির অন্যান্য অর্থের মধ্যে রয়েছে ‘জীবনসঙ্গী’ বা ‘ভ্রমণসঙ্গী’।
স্পেন এর রাজধানী মাদ্রিদে অবস্থিত রাশিয়ান দূতাবাসের সামনে ‘স্পুটনিক ১’ স্যাটেলাইটের একটি ভাস্কর্য আছে। ছবিতে সেটা দেখা যাচ্ছে।
২. স্যাটেলাইট থেকে সম্প্রচারিত প্রথম কণ্ঠস্বর
স্কোর (ইংরেজি SCORE, যার পূর্ণরূপ ‘সিগন্যাল কমিউনিকেশনস বাই অরবিটিং রিলে ইকুইপমেন্ট’) নামের একটি স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণ করা হয় ১৯৫৮ সালের ১৮ ডিসেম্বর।
এই স্যাটেলাইট দিয়েই মহাকাশ থেকে প্রথমবারের মতো কোন মানুষের কণ্ঠ সম্প্রচার করা সম্ভব হয়। মূলত শর্ট ওয়েভ রেডিও তরঙ্গের মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্রের তৎকালীন প্রেসিডেন্ট ডোয়াইট ডি. আইজেনহাওয়ারের দেয়া ক্রিসমাসের শুভেচ্ছা বার্তা সম্প্রচার করা হয় এই স্যাটেলাইটের সাহায্যে। প্রেসিডেন্টের এই বার্তা একটি টেপ রেকর্ডারে ধারণ করে স্যাটেলাইটের সঙ্গে সেটা মহাকাশে পাঠানো হয়েছিল।
এই মিশন সফল হওয়াতে এটা প্রমাণিত হয় যে, পৃথিবীর ওপরের দিকের বায়ুমণ্ডল থেকেও ভূমিতে থাকা গ্রাউন্ড স্টেশনে তথ্য পাঠানো যায়। ফলে পৃথিবীর এক প্রান্ত থেকে আরেক প্রান্তে তথ্য পাঠানোর মাধ্যম হিসেবে স্যাটেলাইট ব্যবহারের সম্ভাবনা তৈরি হয়। বিষয়টা সে সময়ের তুলনায় বড় এক বৈজ্ঞানিক অগ্রগতি।
যে রকেটের সাহায্যে স্যাটেলাইটটি মহাকাশে পাঠানো হয়েছিল, ছবিতে সেটা দেখা যাচ্ছে।
৩. মহাকাশ থেকে টেলিভিশনে সম্প্রচারের জন্য ছবি পাঠানো প্রথম স্যাটেলাইট
‘টিরোস ১’ (TIROS-1) ছিল আবহাওয়া পর্যবেক্ষণের জন্য বিশেষভাবে তৈরি এক স্যাটেলাইট। ১৯৬০ সালের ১ এপ্রিল এই স্যাটেলাইট মহাকাশে স্থাপন করা হয়। এর আগ পর্যন্ত শুধুমাত্র আবহাওয়া পর্যবেক্ষণের জন্য কোনো স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণ করা হয়নি।
কারণ স্যাটেলাইটের মাধ্যমে আমাদের গ্রহ কত ভালোভাবে পর্যবেক্ষণ করা যায়, সে বিষয়ে ধারণা ছিল না কারো। ফলে পরীক্ষামূলকভাবেই নাসা এই স্যাটেলাইটটি তৈরি করে।
স্যাটেলাইট ছিল সে সময়ের নতুন এক প্রযুক্তি। তাই কীভাবে স্যাটেলাইটটি তৈরি করলে সবচেয়ে ভালো ফলাফল পাওয়া যাবে, তা নিয়ে অনেক পরীক্ষা-নিরীক্ষা করেছিলেন এর নির্মাতারা।
পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলের ছবি তোলার জন্য স্যাটেলাইটে দুটি টিভি ক্যামেরা যুক্ত ছিল। মাত্র ১.২৭ সেন্টিমিটার বা ০.৫০ ইঞ্চি চওড়া ক্যামেরা দুটির মধ্যে একটি ছিল ওয়াইড অ্যাঙ্গেল এবং অন্যটি ন্যারো অ্যাঙ্গেল। ক্যামেরায় ধারণ করা ছবি স্যাটেলাইটের ভেতরে থাকা একটি টেপ রেকর্ডারে সংরক্ষণ করা হতো বা পৃথিবীতে অবস্থিত গ্রাউন্ড রিসিভিং স্টেশনে পাঠানো যেত। ছবিতে স্যাটেলাইটের ভেতরে থাকা টেপ রেকর্ডারটি দেখা যাচ্ছে।
৪. সৌরশক্তিতে চলা প্রথম স্যাটেলাইট
‘কুরিয়ার ১বি’ (Courier 1B) ছিল বিশ্বের প্রথম ‘রিপিটার কমিউনিকেশন স্যাটেলাইট’। টেলিযোগাযোগের ক্ষেত্রে ‘রিপিটার’ দিয়ে একটি ইলেকট্রনিক ডিভাইসকে বোঝানো হয়। এই ডিভাইস একটি সিগন্যাল বা সংকেত গ্রহণ করে এবং পুনরায় সেই সিগন্যাল পাঠায়। রিপিটার এর সাহায্যে সিগন্যাল অনেক দূরত্ব অতিক্রম করতে পারে। ফলে যেকোনো তথ্য অনেক দূর পর্যন্ত পাঠানো সম্ভব হয়।
কোডের মাধ্যমে প্রতি মিনিটে প্রায় ৬৮,০০০ শব্দ একইসঙ্গে সম্প্রচার, রিসিভ আর সংরক্ষণ করার ক্ষমতা ছিল ‘কুরিয়ার ১বি’ স্যাটেলাইটের। স্যাটেলাইটের সম্পূর্ণ কার্যক্রম যথাক্রমে নিউজার্সি এবং পুয়ের্তো রিকোতে অবস্থিত দুটি মনিটরিং স্টেশন থেকে নিয়ন্ত্রণ করা হতো। আর সেসব স্টেশনে স্থাপন করা ছিল ৮.৫ মিটারের বড় আকারের ডিশ অ্যান্টেনা।
গোলক আকৃতির এই স্যাটেলাইটের চারপাশে ১৯,২০০টি সোলার সেল বা সৌরকোষ সংযুক্ত ছিল। এসব সৌরকোষের সাহায্যে নিকেল এবং ক্যাডমিয়ামের তৈরি ব্যাটারি চার্জ হতো, যেখান থেকে প্রায় ৬০ ওয়াট শক্তি পাওয়া যেত। এই স্যাটেলাইটেই প্রথমবারের মতো নিকেল-ক্যাডমিয়াম ব্যাটারি ব্যবহার করা হয়। একজন টেকনিশিয়ানের সঙ্গে স্যাটেলাইটটির একটি ছবি দেখা যাচ্ছে।

৫. পেশাজীবীদের বাইরে কারো উদ্যোগে নিক্ষিপ্ত প্রথম রেডিও স্যাটেলাইট
অ্যামেচার রেডিও স্যাটেলাইট হলো মূলত এমন স্যটেলাইট, যা অপেশাদার মানুষ তৈরি করে। এসব স্যাটেলাইট ব্যবহার করে অপেশাদার রেডিও অপারেটররা। এ ধরনের সব স্যাটেলাইটকে ‘অ্যামেচার স্যাটেলাইট সার্ভিস’ এর অন্তর্ভুক্ত মনে করা হয়।
তাদের নিজেদের তৈরি রেডিও স্টেশন থেকে স্যাটেলাইট নিয়ন্ত্রণ করা হয়। স্যাটেলাইটের সঙ্গে যোগাযোগের জন্য তারা নিজেদের ঠিক করা রেডিও ফ্রিকোয়েন্সি ব্যবহার করে।
১৯৬১ সালের ১২ ডিসেম্বর প্রথম অ্যামেচার রেডিও স্যাটেলাইট হিসেবে ‘অস্কার ১’ (OSCAR 1) উৎক্ষেপণ করা হয়।
পৃথিবীর নিম্ন কক্ষপথে পাঠানো হয় এই স্যাটেলাইট। ‘প্রজেক্ট অস্কার’ নামের একটি প্রকল্পের অধীনে স্যাটেলাইটটি নির্মাণ করা হয়। এতে ব্যাটারি চালিত ১৪০ মেগাওয়াটের একটি ট্রান্সমিটার ছিল। আর এই স্যাটেলাইট শুধু একটা সংকেতই পাঠাতে পারতো, আর সেটা হলো ‘হাই’ (Hi)। ৩ সপ্তাহ মেসেজটি প্রচার করার পরে ১৯৬২ সালের ৩ জানুয়ারি স্যাটেলাইট এর কার্যক্রম বন্ধ হয়ে যায়।
অ্যামেচার স্যাটেলাইট থেকে মোর্স কোডের মাধ্যমে ‘হাই’ মেসেজ পাঠানোর প্রচলন শুরু হয় তখন থেকেই। এখনো পর্যন্ত অনেক সংস্থা এই প্রচলন ধরে রেখেছে।
‘অস্কার ১’ উৎক্ষেপণের পর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ভাইস প্রেসিডেন্ট লিন্ডন বি. জনসন এই উদ্যোগকে একটি টেলিগ্রামের মাধ্যমে সাধুবাদ জানান।
আসল ‘অস্কার ১’ স্যাটেলাইটটি পরে সংস্কার করা হয়। এই স্যাটেলাইট এখনো ঠিকঠাক কাজ করছে। ছবিতে ‘অস্কার ১’।

৬. একইসঙ্গে টেলিভিশন ও টেলিফোন সংযোগ এবং দ্রুতগতিতে যোগাযোগের জন্য ব্যবহৃত প্রথম স্যাটেলাইট
১৯৬২ সালের ১০ জুলাই ‘টেলস্টার ১’ (Telstar 1) নামের একটি কমিউনিকেশন স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণ করে নাসা।
এই স্যাটেলাইটের সাহায্যেই যুক্তরাষ্ট্র এবং ইউরোপে একযোগে সরাসরি টেলিভিশন সম্প্রচার সম্ভব হয়।
‘টেলস্টার ১’ এর সাথে যোগাযোগের জন্য যুক্তরাষ্ট্রের ‘মেইন’ রাজ্যে অবস্থিত স্যাটেলাইট গ্রাউন্ড স্টেশনে একটি ১৭৭ ফুট লম্বা অ্যান্টেনা নির্মাণ করা হয়। ছবিতে সেই অ্যান্টেনা দেখা যাচ্ছে।
যুক্তরাষ্ট্রের একটি পারমাণবিক পরীক্ষার কারণে উৎক্ষেপণের মাত্র ৭ মাস পরেই বিকল হয়ে যায় স্যাটেলাইটটি। তবে ‘টেলস্টার ১’ নষ্ট হয়ে গেলেও স্যাটেলাইটটি এখনো পৃথিবীকে কেন্দ্র করে ঘুরছে।
৭. জিওস্টেশনারি কক্ষপথে প্রথম কমিউনিকেশন স্যাটেলাইট
‘সিনকম ৩’ (Syncom 3) ছিল জিওস্টেশনারি কক্ষপথে স্থাপিত প্রথম স্যাটেলাইট। ১৯৬৪ সালে টোকিওতে অনুষ্ঠিত অলিম্পিক গেমস সরাসরি টেলিভিশনে সম্প্রচার করা সম্ভব হয়েছিল এই স্যাটেলাইটের কল্যাণেই। স্যাটেলাইটটি ছবিতে দেখা যাচ্ছে।
আর ‘জিওস্টেশনারি কক্ষপথ’ হলো মূলত পৃথিবীর বাইরে অবস্থিত একটি কক্ষপথ। এই কক্ষপথে কিছু স্থাপন করা হলে বস্তুটি পৃথিবীর ঘূর্ণনের সাথে তাল মিলিয়ে ঘুরতে থাকে। পৃথিবীর কেন্দ্র থেকে এই কক্ষপথের দূরত্ব ৪২,১৬৪ কিলোমিটার বা ২৬,১৯৯ মাইল।
বর্তমানে বেশিরভাগ কমিউনিকেশন স্যাটেলাইটই জিওস্টেশনারি কক্ষপথে স্থাপন করা হয়। এতে করে কোন স্যাটেলাইটের অবস্থান শনাক্ত করার জন্য ভূমিতে অবস্থিত স্যাটেলাইট অ্যান্টেনা বার বার ঘোরাতে হয় না। বরং নির্দিষ্ট একদিকে অ্যান্টেনা স্থাপন করা থাকলেই সেটার বরাবর ওপর দিকে থাকে জিওস্টেশনারি কক্ষপথে স্থাপিত স্যাটেলাইট।
৮. ‘স্যটেলাইট ফোন সার্ভিস’ এর জন্য উৎক্ষেপণ করা প্রথম স্যাটেলাইট
‘ইরিডিয়াম’ নামের একঝাঁক স্যাটেলাইটের মাধ্যমে পৃথিবীর যেকোনো প্রান্ত থেকে ‘স্যাটেলাইট ফোন’-এ যোগাযোগ করা যায়। ‘স্যাটেলাইট ফোন’ হলো বিশেষ এক ধরনের ফোন। এসব ফোন সরাসরি স্যাটেলাইটের সাথে যুক্ত থাকায় পৃথিবীর প্রত্যেক কোণায় এর নেটওয়ার্ক থাকে। ‘ইরিডিয়াম’ স্যাটেলাইটের এই নেটওয়ার্কের সাহায্যে স্যাটেলাইট ফোন, পেজার বা অন্য কোনো ডিভাইসে ইউজারের কণ্ঠ এবং অন্যান্য ডেটা পাঠানো যায়।
প্রথম ইরিডিয়াম স্যাটেলাইটটি উৎক্ষেপণ করা হয় ১৯৯৭ সালের ৫ মে। আর পরীক্ষামূলকভাবে স্যাটেলাইট ফোনের সাহায্যে প্রথম কল দেয়া হয় ১৯৯৮ সালে। ২০০২ সালের মধ্যেই ‘ইরিডিয়াম’ নেটওয়ার্কের সবগুলি স্যাটেলাইটের কার্যক্রম শুরু হয়।
যে উদ্দেশ্যে ‘ইরিডিয়াম’ স্যাটেলাইট প্রকল্প হাতে নেয়া হয়েছিল, সেটা পূরণ হলেও বাজারে স্যাটেলাইট ফোন খুব বেশি জনপ্রিয় হয়নি। প্রথমদিকে নির্মিত একটি ‘ইরিডিয়াম’ স্যাটেলাইটের রেপ্লিকা বা মডেল দেখা যাচ্ছে ছবিতে।
৯. লেজার প্রযুক্তির সাহায্যে মহাকাশে দুটি স্যাটেলাইটের মধ্যে প্রথম সফল যোগাযোগ
২০০১ সালের নভেম্বরে ইতিহাসে প্রথমবারের মতো লেজারের মাধ্যমে মহাকাশে অবস্থিত দুটি স্যাটেলাইটের মধ্যে যোগাযোগ হয়।
এটা সম্ভব হয়েছিল ‘আর্টেমিস’ নামের একটি স্যাটেলাইটের সাহায্যে। স্যাটেলাইটটি তৈরি করে ‘ইউরোপিয়ান স্পেস এজেন্সি’ (সংক্ষেপে ESA)। মূলত টেলিযোগাযোগের কাজে ‘আর্টেমিস’ স্যাটেলাইটটি নির্মাণ ও মহাকাশে পাঠানো হয়। ২০১৭ সালের নভেম্বরে ‘জিওস্টেশনারি’ কক্ষপথে অবস্থিত এই স্যাটেলাইটের কাজ আনুষ্ঠানিকভাবে বন্ধ ঘোষণা করা হয়।
মহাকাশে ‘আর্টেমিস’ দেখতে কেমন লাগতো, সেটাই একজন শিল্পীর তৈরি চিত্রে দেখা যাচ্ছে।
১০. ব্যাংকের মালিকানায় মহাকাশে পাঠানো প্রথম স্যাটেলাইট
কোনো ব্যাংকের মালিকানায় মহাকাশে পাঠানো পৃথিবীর প্রথম স্যাটেলাইটের নাম ‘বিআরআই স্যাট’ (BRIsat)।
BRI এর পূর্ণরূপ ‘ব্যাংক রাকইয়াত ইন্দোনেশিয়া’, আর সেখান থেকেই এই স্যাটেলাইটের নামকরণ। ব্যাংকটির জন্য আমেরিকান এবং ফরাসি দুটি প্রতিষ্ঠান স্যাটেলাইটটি নির্মাণ করেছে। স্যাটেলাইট নির্মাণের সময়কার একটি মুহূর্ত ধরা পড়েছে ছবিতে।
মূলত ব্যাংকিং সংক্রান্ত কাজের উদ্দেশ্যে এই কমিউনিকেশন স্যাটেলাইটটি মহাকাশে পাঠানো হয়। আর ব্যাংক কর্তৃপক্ষই এ স্যাটেলাইটের কার্যক্রম নিয়ন্ত্রণ করে।
ইন্দোনেশিয়া ছাড়াও আসিয়ান ভুক্ত দেশ, উত্তর পূর্ব এশিয়া, প্রশান্ত মহাসাগরের কিছু অঞ্চল এবং পশ্চিম অস্ট্রেলিয়ার কিছু অংশ জুড়ে এই স্যাটেলাইটের কাভারেজ আছে। ইন্দোনেশিয়ার বিভিন্ন দ্বীপে ছড়িয়ে থাকা ব্যাংকটির হাজারো শাখায় নির্ভরযোগ্য যোগাযোগ ব্যবস্থা তৈরি হয়েছে এই স্যাটেলাইটের মাধ্যমে।